নেটওয়ার্ক টপোলজি কি বা কাকে বলে? নেটওয়ার্ক টপোলজি কত প্রকার ও কি কি?
নেটওয়ার্ক টপোলজি কি? নেটওয়ার্ক টপোলজির প্রকারভেদ
নেটওয়ার্ক টপোলজি কাকে বলে? (What is Network Topology?)
একটি নেটওয়ার্কের বিভিন্ন ডিভাইস ও কম্পোনেন্ট যেভাবে নেটওয়ার্কে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে তাকে বলা হয় টপোলজি। যেগুলো নিয়ে একটি নেটওয়ার্ক টপোলজি গঠিত হয় সেগুলো হলো- কম্পিউটার (computer), ক্যাবল (Cable), সুইচ (switch), রাউটার (router), হাব (Hub), ইন্টারনেট কানেকশন (Internet connection) ইত্যাদি।
মূলত ডেটা বিনিময়, ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বেশি সুবিধা লাভ করার জন্যই বিভিন্ন নেটওয়ার্ক টপোলজি (Network Topology) গড়ে তোলা হয়। মূলত এরা নেটওয়ার্কের ফিজিক্যাল লেআউট (Layout) বর্ণনা করে থাকে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্ক টপোলজি কত প্রকার ও কি কি? (How many types of computer network topology?)
এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে ছয় ধরনের কম্পিউটার নেটওয়ার্ক টপোলজি ব্যবহৃত হয়েছে। যথা-
- বাস টপোলজি (Bus Topology).
- রিং টপোলজি (Ring Topology).
- স্টার টপোলজি (Star Topology).
- ট্রি টপোলজি (Tree Topology).
- হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology).
- মেশ টপোলজি (Mesh Topology).
আরও পড়ুন:
মোবাইল ফোন কি? মোবাইল ফোনের জনক, বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা
কম্পিউটার কাকে বলে? কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ ও ব্যবহার
ই মেইল কি বা কাকে বলে? ইমেইল এর সুবিধা ও অন্যান্য তথ্য
বাস টপোলজি (Bus Topology)
বাস টপোলজি কী / বাস টপোলজি কাকে বলে? (What is Bus Topology?)
বাস টপোলজি এমন একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম যেখানে একটি প্রধান ক্যাবলের মাধ্যমে বা সাহায্যে সবকটি ওয়ার্কস্টেশন (work-Station) বা কম্পিউটার এক সাথে সংযুক্ত থেকে ডেটা আদান-প্রদান করে। বাস টপোলজির প্রধান ক্যাবলটিকে বা তারটিকে ব্যাকবোন (Backbon) হিসেবে অভিহিত করা হয়। কম্পিউটারগুলো ব্যাকবোনে সিগন্যাল/ সংকেত প্রেরণ করে। সিগন্যাল যখন মেইন লাইনে চলাফেরা করে শুধু প্রাপক কম্পিউটার সিগন্যাল গ্রহণ করে।
যে computer এর উক্ত ডেটার প্রয়োজন নেই, ওই Computer একে অগ্রাহ্য করে। বাস টপোলজি ছোট আকারের নেটওয়ার্কে ব্যবহার খুব সহজ, সাশ্রয়ী ও বিশ্বস্ত।এতে কম ক্যাবল লাগে ফলে খরচও কম। এ নেটওয়ার্কে কোনো Computer অচল হয়ে গেলে সম্পূর্ণ সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায় না। বাস টপোলজিতে একই নেটওয়ার্কে ভিন্ন Cable ব্যবহার করা যায়।
বাস টপোলজি এর সুবিধা (Advantages of Bus Topology)
- বাস টপোলজি ছোট আকারের নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়।
- বাস টপোলজি খুব সহজ এবং বিশ্বস্ত ।
- এ টপোলজিতে সবচেয়ে কম Cable প্রয়োজন হওয়ার ফলে খরচও কম হয়।
- রিপিটার ব্যবহার করে এ নেটওয়ার্কের ব্যাকবোনকে প্রসারিত করা যায়।
- এ সংগঠনে কোনো কম্পিউটার বা ওর্য়াকস্টেশন বিকল হয়ে গেলে পুরো সিস্টেম অচল হয়ে যায় না।
- এ সংগঠনে কোনো Computer বা যন্ত্রপাতি সহজেই যোগ করা যায় বা সরিয়ে নেয়া যায়। এতে পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রমের ক্ষতি হয় না।
বাস টপোলজির অসুবিধা (Disadvantages of Bus Topology)
- বাস টপোলজিতে Computer সংখ্যা বেশি হলে ডেটা ট্রান্সমিশন/স্থানান্তর বিঘ্নিত হয়।
- এ টপোলজিতে ডেটা Transmission এর গতি কম হওয়ার কারণে সময় বেশি লাগে।
- বাস টপোলজির সৃষ্ট trouble নির্ণয় তুলনামূলক খুব কঠিন।
- মূল ক্যাবলের / তারের একটিমাত্র স্থানে সৃষ্ট ত্রুটি পুরো Network কে বিকল করে দিতে পারে।
আরও পড়ুন:
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? কীভাবে কাজ করে, প্রাত্যহিক জীবনে এর ব্যবহার
কৃত্রিম উপগ্রহ কি বা কাকে বলে? কৃত্রিম উপগ্রহের প্রকারভেদ ও ব্যবহার
রিং টপোলজি (Ring Topology)
রিং টপোলজি কী / রিং টপোলজি কাকে বলে? (What is Ring Topology?)
রিং টপোলজিতে কম্পিউটার তার পাশের কম্পিউটারের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এই ব্যবস্থায় কোনো Computer ডেটা Send করলে তা বৃত্তাকার পথে Computer গুলোর মধ্যে ঘুরতে থাকে যতক্ষণ না নির্দিষ্ট কম্পিউটার Data গ্রহণ করে। এ টপোলজিতে কোনো নিয়ন্ত্রক Computer থাকে না। যার কারণে প্রতিটি কম্পিউটারের গুরুত্ব সমান। রিং টপোলজিতে প্রথম কমপিউটারটি শেষ কমপিউটারের সাথে সংযুক্ত থাকে।
রিং টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Ring Topology)
- এ পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় কোন কম্পিউটার বা সার্ভারের প্রয়োজন হয় না।
- রিং টপোলজি নেটওয়ার্কে অবস্থিত প্রতিটি Computer এর মান সমান।
- Computer সংখ্যা বাড়লেও এর দক্ষতা খুব বেশি প্রভাবিত হয় না।
- রিং টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of Ring Topology)
- একটি Computer নষ্ট হলে পুরো নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ে।
- রিং টপোলজির নেটওয়ার্কে সমস্যা নিরূপণ বেশ জটিল।
- নেটওয়ার্কে কোনো Computer যুক্ত করলে বা সরিয়ে নিলে তা পুরো নেটওয়ার্কের কার্যক্রম ব্যাহত করে।
আরও পড়ুন:
জিএসএম কি বা কাকে বলে? জিএসএম এর বৈশিষ্ট, সুবিধা-অসুবিধা
সিডিএমএ কি বা কাকে বলে? সিডিএমএ এর বৈশিষ্ট, সুবিধা-অসুবিধা
জিএসএম ও সিডিএমএ এর মধ্যে পার্থক্য কী?
স্টার টপোলজি (Star Topology)
স্টার টপোলজি কী? / স্টার টপোলজি কাকে বলে? (What is Star Topology?)
স্টার টপোলজি এমন একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেম যেখানে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী Computer বা ছোট Computer এর সাথে অন্যান্য কম্পিউটার সংযুক্ত করে নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করে। Computer গুলো কেন্দ্রীয় Computer এর সাহায্যে ইনফরমেশন আদান-প্রদান করে থাকে। এ সংগঠনে কোনো Computer নষ্ট হয়ে গেলে বাকি নেটওয়ার্কে তার প্রভাব পড়ে না। খুব সহজেই সমস্যায় আক্রান্ত কম্পিউটারটি সরিয়ে নেয়া যায়। স্টার টপোলজি একটি জনপ্রিয় নেটওয়ার্ক টপোলজি। এই টপোলজিতে একই নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ধরনের ক্যাবল ব্যবহৃত হতে পারে। এর সেন্টারে থাকা Computer কে হাব বলা হয়।
স্টার টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Star Topology)
- নেটওয়ার্কে কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করেই নতুন Computer যুক্ত করা যায়।
- কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার জন্য Network সমস্যা নিরূপণ সহজ।
- ইনটেলিজেন্ট হাব ব্যবহার করালে তার ওয়ার্কলোড মনিটরিং করা যায়।
- এ সংগঠনে কোনো একটি Computer নষ্ট হয়ে গেলে পুরো নেটওয়ার্কে এর কোনো প্রভাব পড়ে না।
- খুব সহজেই বিকল কম্পিউটারটি সরিয়ে নেয়া যায়।
- এই নেটওয়ার্ক টপোলজিতে বিভিন্ন ধরনের Cable ব্যবহৃত হয়।
স্টার টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of Star Topology)
- কেন্দ্রে থাকা হাবে সমস্যা হলে তা নেটওয়ার্ককে অকেজো করে দেয়।
- ক্যাবল(cable) বেশি লাগে বিধায় এটি একটি ব্যয়বহুল পদ্ধতি।
- Computer সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ডেটা স্থানান্তর হার হ্রাস পায়।
আরও পড়ুন:
গোপনে কেউ আপনার কল রেকর্ড করছে কি না বুঝবেন যেভাবে
মোবাইলের পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন লক ভুলে গেলে কিভাবে খুলবো
ক্যাবল ছাড়াই মোবাইল থেকে কম্পিউটারে ফাইল ট্রান্সফার যেভাবে করবেন
ট্রি টপোলজি (Tree Topology)
ট্রি টপোলজি কী?/ ট্রি টপোলজি কাকে বলে ( What is Tree Topology?)
ট্রি টপোলজি দেখতে অনেকটা গাছের মতো। গাছের কাণ্ডের সাথে শাখা প্রশাখা যেভাবে বিন্যস্ত থাকে, এই টপোলজিতে Computer গুলো একটি মূল Computer এর সাথে ঠিক সেভাবেই সাজানো থাকে।
এ টপোলজিতে পূর্বের সারির computer গুলো পরবর্তী সারির computer গুলোর হোস্ট হিসেবে কাজ করে। অফিস ম্যানেজমেন্টের কাজে এ Network Topology খুবই উপকারী। শাখা-প্রশাখা গঠন করার সাহায্য ট্রি টপোলজির Network প্রসারিত করা সহজ।
ট্রি টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Tree Topology)
- অফিসের কাজ সহজ করার এটি বহুল ব্যবহৃত টপোলজি।
- শাখা-প্রশাখা তৈরী করার মাধ্যমে ট্রি টপোলজির নেটওয়ার্ক সহজেই এক্সপান্ড করা যায়।
- নতুন কোনো নোড সংযোগ বা বাদ দিলে নেটওয়ার্কের কাজের কোনো অসুবিধা দেখা যায় না।
- এটি Bus Topology (বাস টপোলজি) ও স্টার টপোলজির ( Star Topology) সমন্বয়ে গঠন করা হয়।
- অন্য টপোলজির সমন্বয়ে গঠিত হওয়ার ফলে এর ডেটা স্থানান্তরের ব্যান্ডউইথ গতি বেশি।
ট্রি টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of Tree Topology)
- এ টপোলজি নেটওয়ার্কের স্ট্রাকচার কিছুটা জটিল।
- রুট বা সার্ভার বা প্রাইম (prime) হোস্ট কম্পিউটারে ত্রুটি দেখা দিলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্কটি অচল হয়ে যায়।
- এই সংগঠনটিতে বেশি পরিমাণে কম্পিউটার যুক্ত থাকার কারণে রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব জটিল।
- এটি স্থাপন করা খুবই ব্যয়বহুল।
হাইব্রিড টপোলজি (Hybrid Topology)
হাইব্রিড টপোলজি কি? / হাইব্রিড টপোলজি কাকে বলে? (What is Hybrid Topology?)
‘Bus, Star, Ring প্রভৃতি টপোলজি দিয়ে গঠিত নেটওয়ার্ক টপোলজি-কে হাইব্রিড টপোলজি বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ:- ইন্টারনেট হলো একটি বৃহৎ পরিসরের নেটওয়ার্ক টপোলজি। হাইব্রিড টপোলজিতে প্রয়োজনানুসারে Computer বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে। কোথাও কোনো প্রোবলেম দেখা দিলে তা ইজিলি চিহ্নত করা যায়। কোনো একটি অংশ নষ্ট হলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক এর ক্ষতি হয় না ।
হাইব্রিড টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Hybrid Topology)
- এ টপোলজিতে প্রয়োজনানুযায়ী নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করার সুযোগ রয়েছে।
- কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হয়।
- কোনো এক অংশ নষ্ট হয়ে গেলে সম্পূর্ণ নেটওয়ার্ক নষ্ট না হয়ে অংশবিশেষ নষ্ট হয়।
হাইব্রিড টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of Hybrid Topology)
- এ টপোলজিতে ব্যবহৃত হাবগুলো সর্বদা চালু রাখতে হয়।
- এতে বিদ্যুৎ খরচ অন্যান্য টপোলজির তুলনায় অনেক বেশি।
- এর স্ট্রাকচার খুবই কঠিন।
- এই টপোলজিতে অনেক ক্যাবল ও কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে রক্ষণাবেক্ষণ করা খুবই জটিল।
মেশ টপোলজি (Mesh Topology)
মেশ টপোলজি কী? / মেশ টপোলজি কাকে বলে? (What is Mesh Topology? )
যে নেটওয়ার্ক সংগঠনে ডিভাইস বা computer সমূহের মধ্যে অতিরিক্ত কানেকশন থাকে তাকে বলা হয় মেশ টপোলজি। বেশিরভাগ Mesh Topology (মেশ টপোলজি) নেটওয়ার্ক বাস্তবিকপক্ষে মেশ নেটওয়ার্ক নয়। এগুলো প্রকৃতপক্ষে হাইব্রিড (Hybrid) মেশ Network। এখানে শুধুমাত্র কয়েকটি অতিরিক্ত বা অপ্রয়োজনীয় লিংক ব্যবহার করা হয় । যার ফলে ডেটা কমিউনিকেশনে বেশি নিশ্চয়তা থাকে এবং নেটওয়ার্কের সমস্যা খুব সহজে সলভ করা যায়। মেশ টপোলজিতে রিং টপোলজির মতো নেটওয়ার্ক এর প্রথম Computer টি শেষ computer এর সাথে যুক্ত থাকে। রিং টপোলজিতে কমপিউটারগুলোকে পরস্পরের সাথে অতিরিক্ত তার দিয়ে সংযুক্ত করলেই তা মেশ টপোলজিতে পরিণত হয়।
মেশ টপোলজি ব্যবহারের সুবিধা (Advantages of Mesh Topology)
- মেশ টপোলজি নেটওয়ার্কে খুব বড় ধরনের সমস্যা দেখা যায় না।
- এতে ডেটা স্থানান্তরে অনেক বেশি নিশ্চয়তা থাকে।
- অন্যান্য টপোলজির তুলনায় এই টপোলজির সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়
- ডেটা ট্রান্সমিশন দ্রুতগতিতে হয়ে থাকে।
- এটির সাহায্যে যেকোনো দুইটি computer এর মধ্যে দ্রুত গতিতে তথ্য প্রেরণ ও গ্রহণ করা যায়।
মেশ টপোলজি ব্যবহারের অসুবিধা (Disadvantages of Mesh Topology)
- এ টপোলজিতে নেটওয়ার্ক installation ও structure বেশ জটিল।
- নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত লিংক স্থাপন করতে হয় বিধায় এতে খরচ বেড়ে যায়।
- এখানে তার বেশি লাগে বিধায় খরচ বেড়ে যায়।
ধন্যবাদ ভাই
সবগুলো টপোলজি একসাথে দেওয়ার জন্য ❤️❤️